অন-লাইন

আন্দোলন, বিপ্লবী এবং প্রতিবিপ্লবীরা

  প্রতিনিধি ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ , ২:৩৮:২৮

শেয়ার করুন

রাজা বা রাজ পুরুষদের রাজনীতি আলোচনা হয় এক গোপনকক্ষে এক অন্তরঙ্গ ভদ্রতার চরম পরাকাষ্ঠায়। সে ভদ্রতার ঘোমটার আড়ালে থাকে বহু পাপ, চাকচিক্যময় ভাষা, ঢেকে রাখে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, আকাঙ্খা এবং পাপ। যখন এই দ্বন্দ্বের ফলে শুরু হয় যুদ্ধ বহু তরুন জীবনকে পাঠানো হয় তাদের লোভের বলি হতে। আমরা এই সব নীচ অভিপ্রায়ের কথা শুনতে পাই না, পরিবর্তে আমাদের শোনান হয় মহান আদর্শ, সৎ এবং উদ্দেশ্যের কথা। রাজপুরুষেরা অসংখ্য নাম না জানা তরুনের জীবন দাবী করে এই আদর্শের জন্য।

কিন্তু বিদ্রোহ সম্পুর্ন ভিন্ন জিনিস। তার উৎপত্তি মাঠে-ঘাটে, হাটে বাজারে, চায়ের দোকানে অথবা সস্তা কোন পানশালায়। বিদ্রোহ যারা শুরু করে তাদের কিন্তু রাজা বা নেতাদের মত শিক্ষার সুযোগ হয় না, থাকেনা বংশের কৌলিন্য। বিদ্রোহীদের ভাষা কিন্তু ভদ্র বা শিষ্টাচারের আবরনে ঢাকা থাকে না, কারন এদের মাঝে লুকিয়ে থাকে না ষড়যন্ত্র শঠতা। তাদের মাঝে রহস্যের কিছু নেই, মনের কুটিলতা ঢাকার জন্য ভদ্রতার ঘোমটা বিদ্রোহীদের দরকার নেই। বিদ্রোহের রাজনীতি রাজা বা রাজনীতিকদের কাছে খেলার জিনিস, কিন্তু বিদ্রোহীদের সহবাস সত্যের সাথে আর এর পেছনে থাকে বঞ্চনা এবং শুন্য উদর।

আদর্শবাদ এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির দুর্দশায় বিপ্লব বা বিদ্রোহের সৃষ্টি হয়। কর্তৃপক্ষ তাদের প্রচলিত ধ্যান ধারনার সাথে খাপ খায় না বলে শুরুতে এগুলো উপলদ্ধি করেনা। যারা প্রচলিত অবস্থায় অসন্তুষ্ট হয় এবং তা পরিবর্তনে তৎপর হয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে এরাই আন্দোলনকারী। আন্দোলনকারীদের উৎপত্তি হয় অসন্তোষ থেকে। কিন্তু শুধু আন্দোলনকারীদের কথা শুনে লক্ষ লক্ষ লোক আন্দোলনকে রাস্তবায়িত করতে পারে না। প্রায় সব মানুষই বিশেষ করে রাজনীতিবিদ বা রাজারা নিজেদের নিরাপত্তা এবং ধন সম্পত্তিকে স্থান দেয় সবার ওপরে এবং অকারনে আন্দোলনের নামে তারা সেটা বিপন্ন করতে চায় না। কিন্তু অবস্থা যখন এমন হয়ে দাঁড়ায় যে দুর্দশা দিন দিন বেড়েই চলছে এবং প্রান ধারনই দুর্বিষহ হয়ে দাড়ায় তখন সব থেকে দুর্বলও অমিত শক্তির অধিকারী হয়ে রাস্তায় নামে। একেই আন্দোলন বলে।

ফরাসি বিল্পবের ইতিহাস পড়তে পড়তে কথাগুলো মাথায় ঘুরছিল। রুশ বিপ্লবও এর বাইরে না। ইচ্ছা আছে ধারাবাহিকভাবে এগুলো লিখব। ল্যাতিনে একটা সুপরিচিত কথা আছে Queen deus perdere vult, prius demental. মানে হল “খোদা যাকে বিনষ্ট করতে চায়, প্রথমে তাকে উন্মাদ করে দেন।” ফরাসি বিপ্লবে দুর্দশায় অতিষ্ঠ জনগনের ক্ষোভে ঘৃতাহুতি দেয় ভলটেয়ার, রুশো, মঁতেস্কুর মত লেখক দার্শনিকরা। যে কোন বিপ্লব, বিদ্রোহ বা আন্দোলনে লেখক কবি দার্শনিকদের একটা বড় ভুমিকা থাকে। বিদ্রোহের প্রারাম্ভে নেতৃত্বের সুযোগ নেবার জন্য বিদ্রোহীদের মাঝেই থাকে সুযোগ সন্ধানী বিপ্লবীরা। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতি বিপ্লব তাদের দমন করে এর জ্বলন্ত উদাহরন বাংলাদেশ ১৯৭৫ সালের নভেম্ভর। আজকে এই পর্যন্ত।

ইউরোপ, রাশিয়া, ফরাসী বিপ্লবের বই পড়ছি, আর নির্যাসটুকু মাথায় ঘুর পাক খায়।

শোভন রেজাউনুল হক


শেয়ার করুন