প্রতিনিধি ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ১:৩৩:৩৯
আপনি যদি, চায়নার বিনিয়োগের দিকে তাকান তবে দেখতে পাবেন তাদের মুল বিনিয়োগ এখন আফ্রিকা এবং ল্যাতিন আমেরিকায়। বর্তমানে আফ্রিকাতে চীনা অর্থে এক হাজারের ওপর প্রজেক্ট বাস্তবায়িত হচ্ছে। চাইনিজ প্রযুক্তিতে সেখানে ২২৩৩ কিমি রেল লাইন এবং ৩৩৫০ কিমি হাইওয়ে নির্মিত হচ্ছে।। প্রায় ৫৪ টি আফ্রিকান দেশকে রেল ও সড়ক পথে এক করছে এই চীন। বর্তমানে দক্ষিন আফ্রিকায় ২ লাখ, এঙ্গোলায় ৩০ হাজার, নাইজেরিয়ায় ৫০ হাজার এবং জাম্বিয়ায় ৪০ হাজার চীনা নাগরিক বসবাস করছে।
বছরে চীন ১৫০ বিলিয়ন ডলার খরচ করছে এসব দেশে। প্রায় দশ লাখ চীনা নাগরিক বসবাস করছে ওই সব দেশে। আফ্রিকায় তৈরি হচ্ছে এক সংকর জাতি। বাবা চীনা, মা আফ্রিকান। এরা বাবার চীনা উপাধি ব্যাবহার করছে। এটাই চীনা উপনিবেশবাদের প্রাথমিক পর্যায়। খেয়াল করুন সেই ১৬ শতক থেকে বিশ শতকের মাঝামাঝি ব্রিটেন, ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল যখন আফ্রিকা, দক্ষিন-পূর্ব এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকাতে উপনিবেশ তৈরি করেছিল ঠিক একই কায়দায় ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে গ্রেট চীন। পার্থক্য হল বিশ শতক পর্যন্ত বন্দুকের জোরে কোন দেশে উপনিবেশবাদ কায়েম করা হত। এখন হচ্ছে, ঋনের ফাদে আটকিয়ে।
চীনের রয়েছে প্রচুর অর্থ, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এখন চীনের ১৩.৬১ ট্রিলিয়ন। অন্য দিকে আমেরিকা প্রথম তার কাছে রয়েছে ২০.৫৪ ট্রিলিয়ন ডলার। মজার ব্যাপার হল প্রতি বছর এই পার্থক্য কমে আসছে। আরো মজার ব্যাপার হল ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে এই মুহুর্তে পৃথিবীতে চীন প্রথম ২১.২ ট্রিলিয়ন ডলার (আই এম এফ)। চাইনিজ ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড গ্রাস করে নিচ্ছে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশকেই। এর মাধ্যমে আগামী কয়েশ বছর বিশ্বে চীনা রাজত্বের শুরু হতে যাচ্ছে। চীনা পন্যের এক বিশাল বাজার গড়ে উঠবে One belt one road (OBOR) দেশ সমুহে।
চায়নীজ অর্থনৈতিক উন্নতির এক বিশাল ফিরিস্তি দিতে পারি। তবে তার কোন দরকার আছে বলে মনে হয় না। এইবার আসি চীনের মিয়ানমারের ওপর প্রভাব। অনেকেই ভুল ধারনা নিয়ে আছি, পশ্চিমা প্রভাবে হয়ত চীনে বিদ্রোহী গোষ্ঠী গুলো এত খানি অগ্রসর হয়েছে। বাস্তবতা হল, পশ্চিমা অসাঢ় বানীর পাশাপাশি চীনের প্রত্যক্ষ মদদে বিদ্রোহী গোষ্ঠী গুলো মায়ানমারের জান্তা সরকারকে পতনের গোড়ায় নিয়ে এসেছে। যদি শেষ পর্যন্ত জান্তারা টিকে ও যায় তাতেও চীনের লাভ আর বিদ্রোহীরা জিতলে তাতেও চীনের লাভ। সোজা কথা মায়ানমারে যেই জিতুক না কেন, চীনের প্রভাবেই থেকে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে চীন সবে মাত্র হস্তক্ষেপ করছে। এরই মাঝে বিলিয়ন ডলার ঋনের ফাদে বাংলাদেশ কে চীন আটকে ফেলেছে। ২০২২-২৩ তে তারা বাংলাদেশ কে ১১৩ কোটি ডলার দেয়। সামনে আরো দিবে নিশ্চিত। কারন অর্থনৈতিক ভাবে বাংলাদেশের অবস্থা খুবই সঙ্গীন। এ অবস্থায়, ২-৪ বিলিয়ন ডলার ধার দেয়া চীনের কাছে হাতের ময়লা। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কি ঘটবে?
বাংলাদেশের মানুষ এই মুহুর্তে ভীষন ভাবে ভারত বিরোধী। যেটা চীনের জন্য সাপে বর। খেয়াল করে দেখুন, পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশের রাজনীতিতে পিছুটান দিয়ে ভারতের প্রতক্ষ্য ইচ্ছায়। অতি সাম্প্রতিক নির্বাচনে ভারতের আশীর্বাদ পুষ্ট সরকার গঠন হয় এদেশে। এই অঞ্চলে চীনের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত, অথচ সেই ভারতের সমর্থন পুষ্ট সরকারকেই চীন এক নিষ্ঠ সমর্থন নিয়ে নিজের অবস্থান তৈরি করছে, কারন চীন জানে তাড়াহুড়ো করে এদেশে তারা ঢুকতে পারবে না।
এই সমর্থন আগামী ৫ বছর আরো শক্ত হবে নিশ্চিত বলা যায়। দেশীয় অবকাঠামোয় চীনা ঋন যত বাড়বে ভারতের প্রভাব তত কমবে প্রায় নিশ্চিত। চীনের প্রভাব বাড়া মানে এদেশে পাকিস্তানের নীরব রাজনৈতিক এবং গোয়েন্দা কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাবে। ধীরে ধীরে এদেশ থেকে পশ্চিমা প্রভাব প্রায় উঠেই যাবে। ঠিক তখনি চীন এমন কিছু খেলা খেলবে যাতে সরাসরি বাংলার মাঠে মুখোমুখি হবে ভারত এবং চীন। তবে এমনটা ঘটতে আরো বেশ কয়েক বছর লাগবে।
(পুরো লেখাটা লিখতে গিয়ে চীনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, মায়ানমারে বিদ্রোহীদের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশে চীনের অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা গুলো পড়তে হয়েছে )
লেখক – শোভন রেজাউনুল হক