জাতীয়

হাসিনা-শি বৈঠক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার

  প্রতিনিধি ১০ জুলাই ২০২৪ , ৭:৪৭:৫৫

শেয়ার করুন

ঢাকা-বেইজিং বিদ্যমান সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বাংলাদেশে ‘ব্যাপক ভিত্তিক অংশীদারিত্বমূলক কৌশলগত সহযোগিতা’ বাড়ানোর কথাও জানিয়েছেন তিনি। চীন সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে শি জিনপিং এসব অঙ্গীকার করেন। ওই বৈঠকের বরাতে বার্তা সংস্থা সিনহুয়া এমনটাই জানিয়েছে। এদিকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাসস জানিয়েছে, বুধবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গ্রেট হল অব দ্য পিপল-এ সকালে চীনের প্রধানমন্ত্রী কে কিয়াং এবং বিকালে প্রেসিডেন্ট শি’র সঙ্গে বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের বৈঠক হয়। প্রেসিডেন্ট শি’র সঙ্গে বৈঠকের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর। দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল হাসিনা-শি’র। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট শি বাংলাদেশ সফর করেন। সেই সফরে দুই দেশের সম্পর্ক ‘সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্ব’ পর্যায়ে উন্নীত হয়।

 

চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে প্রতিনিধিদল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে ১ বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতার অঙ্গীকার পাওয়া গেছে। দ্বিপক্ষীয় সেই বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে ২১টি দলিল সই হয়। সেই সঙ্গে ৭টি প্রকল্পের ঘোষণা আসে। অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং খাতে সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ডিজিটাল অর্থনীতি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সহায়তা, ৬ষ্ঠ ও ৯ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণ, বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানি এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ ইত্যাদি বিষয়ে সমঝোতাগুলো সই হয়েছে। সরকারি সংবাদ সংস্থার রিপোর্ট মতে, শি জিনপিং এবং লি কিয়াংয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে আলোচনা ছাড়াও আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোও স্থান পেয়েছে। সেখানে রোহিঙ্গা সমস্যা, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং উন্নয়নে সহযোগিতার মতো বিষয়গুলো প্রাধান্য পায় বলে জানানো হয়েছে। চীনের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সোমবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী বেইজিং পৌঁছান। মেয়ের অসুস্থতায় সফরটি সংক্ষিপ্ত করে বুধবার রাত ১০টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়) তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে বেইজিং ত্যাগ করেন। টানা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বরত শেখ হাসিনার এটা ছিল চতুর্থ চীন সফর। তার আগে তিনি ২০১০, ২০১৪ এবং ’১৯ সালে চীন সফর করেন। ’৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বীকার করে নেয়া চীনের সঙ্গে আগামী বছর কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্‌যাপিত হবে। তাছাড়া গত ২১-২২শে জুন ভারত সফরের ১৫ দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে বেশ কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে ভারত ও পশ্চিমা বিশ্ব সরকার প্রধানের বেইজিং সফরে তীক্ষ্ণ নজর রাখছে। যদিও দেশটির সঙ্গে বন্ধুত্ব রক্ষার চেষ্টা করা বঙ্গবন্ধু ১৯৫২ ও ১৯৫৭ সালে দু’দফা চীন সফর করেন। তিনি চীনের মহান নেতা মাও সেতুং এবং চৌ এন লাই-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। চীনা নেতৃত্ব এবং তাদের নীতির প্রতি জাতির পিতার আস্থা, বিশ্বাস ও প্রশংসার প্রতিফলন রয়েছে ‘আমার দেখা নয়া চিন’ শিরোনামের প্রকাশিত বইতে।
বাংলাদেশের উন্নয়নে চীনের সমর্থন অব্যাহত রাখার আশ্বাস শি জিনপিংয়ের: বাসস জানায়, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উন্নয়নের দিকে বাংলাদেশের যাত্রার প্রতি তার অব্যাহত সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছেন। বুধবার বিকালে গ্রেট হল অব দ্য পিপল-এ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, “চীন বাংলাদেশকে চারটি উপায়ে- অনুদান, সুদমুক্ত ঋণ, রেয়াতি ঋণ ও বাণিজ্যিক ঋণ দিয়ে সাহায্য করবে। দুই নেতার বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে অবহিত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি জানান, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দুই নেতার মধ্যে অত্যন্ত সফল আলোচনা হয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তার জন্য কীভাবে চার ধরনের আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে- সে ব্যাপারে দুই দেশের কারিগরি কমিটি একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি আরও বলেন, চীন থেকে একটি কারিগরি কমিটি শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবে। ড. হাছান জানান, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর রোহিঙ্গা বিষয়টি উত্থাপনের আগেই চীনের প্রেসিডেন্ট ইস্যুটি গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেন। শি বলেন, আমরা মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবো। তিনি মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগের আবেদন জানালে চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা বাংলাদেশে ক্রমাগত আরও বিনিয়োগ করতে চাই। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত রয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এ অঞ্চলের উন্নয়নে চীনের সহায়তা কামনা করেন। জবাবে প্রেসিডেন্ট শি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে সহায়তার আশ্বাস দেন। প্রধানমন্ত্রী গত কয়েক দশকে চীনের অভূতপূর্ব উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বলেন, ‘উন্নয়নের ক্ষেত্রে চীন আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি অনুপ্রেরণা।’ প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু ও কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলের মতো কিছু আইকনিক অবকাঠামো নির্মাণে বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য চীনের প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান। বৈঠকে উভয় নেতা দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে অন্য মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। শি জিনপিং বলেন, আমরা, দুটি দেশ, আগামী বছর কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদ্‌যাপন করতে যাচ্ছি। এই উদ্‌যাপন উপলক্ষে আমরা বিদ্যমান কৌশলগত সম্পর্ককে দ্বিতীয় ধাপে নিয়ে যেতে চাই। শেখ হাসিনা দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। প্রধানমন্ত্রী দুটি দেশের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতার বিষয়টি উত্থাপন করেন এবং ব্যবধান কমাতে চীনের প্রতি আহ্বান জানান। জবাবে চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা বাংলাদেশ থেকে আরও পণ্য আমদানি করবো। তিনি বলেন, চীন বাংলাদেশ থেকে আম আমদানি করবে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং বাস্তবায়নাধীন আইটি ভিলেজগুলোতে আরও বিনিয়োগ করার জন্য চীনের প্রতি আহ্বান জানান। জবাবে শি বলেন, তারা বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করতে চান। চীনের প্রেসিডেন্ট আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বিশ্বশান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠায় চীন ও বাংলাদেশ একসঙ্গে কাজ করবে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে চীনের সহায়তাও চেয়েছেন। চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, একটি দেশের জন্য কৃষিতে স্বাবলম্বী হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি কারিগরি সহায়তা ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে বাংলাদেশকে এ খাতে সাহায্য করার আশ্বাস দেন। শি জিনপিং আরও সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। উভয় নেতা আওয়ামী লীগ ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার আহ্বান জানান। শি বলেন, ‘আইনের শাসন নিশ্চিত করা সুরাজনৈতিক দলগুলোর জন্য অধিকতর জরুরি।’ প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।

চীনের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ সংবর্ধনা: এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সকালে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের জন্য গ্রেট হল অব দ্য পিপলে পৌঁছালে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। তিনি গ্রেট হল অব দ্য পিপল প্রাঙ্গণে পৌঁছালে চীনের প্রধানমন্ত্রী স্বাগত জানান। পরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একটি বিশেষভাবে সজ্জিত মঞ্চে যান এবং চীনা সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় অতিথিকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এই সময় দুই দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। শেখ হাসিনা সালাম গ্রহণ এবং গার্ড পরিদর্শন করেন। সেখানে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে গান স্যালুট জানানো হয়। অনুষ্ঠানে উভয় প্রধানমন্ত্রী পরাস্পরের সঙ্গে নিজ নিজ প্রতিনিধিদলের সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেন। এদিকে স্বাগত অনুষ্ঠানের পর গ্রেট হল অব দ্য পিপলে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শুরু হয়।

যেসব বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক:
১. ডিজিটাল অর্থনীতিতে বিনিয়োগ সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই।
২. চায়না ন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল রেগুলেটরি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনএফআরএ) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে ব্যাংকিং ও বীমা নিয়ন্ত্রণ-সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই।
৩. বাংলাদেশ থেকে চীনে তাজা আম রপ্তানির জন্য উদ্ভিদ স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত (ফাইটোস্যানিটারি) উপকরণ বিষয়ে একটি প্রটোকল সই করে দুই দেশ।
৪. অর্থনৈতিক উন্নয়ন নীতি সহায়তার ক্ষেত্রে একটি সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে।
৫. বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহায়তা বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
৬. বাংলাদেশে প্রকল্পে চায়না-এইড ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের ‘সম্ভাব্যতা সমীক্ষা’ বিষয়ে আলোচনার একটি সাইনিং অব মিনিটস (কার্যবিবরণী) সই হয়।
৭. চীনের সহায়তায় ষষ্ঠ বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু সংস্কার প্রকল্পের চিঠি বিনিময় হয়।
৮. নাটেশ্বর প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা পার্ক প্রকল্পে চায়না-এইড কনস্ট্রাকশনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা বিষয়ে চিঠি বিনিময় হয়।
৯. চীনের সহায়তায় নবম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু প্রকল্প বিষয়ে চিঠি বিনিময় হয়।
১০. চিকিৎসাসেবা ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ে সহযোগিতা শক্তিশালী করতে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
১১. অবকাঠামোগত সহযোগিতা জোরদারে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
১২. গ্রিন অ্যান্ড লো-কার্বন উন্নয়নে সহযোগিতা বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে দুই দেশ।
১৩. বন্যার মৌসুমে ইয়ালুজাংবু (ব্রহ্মপুত্র) নদের হাইড্রোলজিক্যাল তথ্য বাংলাদেশকে দেয়ার বিধিবিষয়ক সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হয়।
১৪. চীনের জাতীয় বেতার ও টেলিভিশন প্রশাসন এবং বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়।
১৫. চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি) এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক সই হয়। বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ এতে সই করেন।
১৬. চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি) ও বিটিভির মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়।
১৭. সিনহুয়া নিউজ এজেন্সি ও বিটিভির মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই।
১৮. চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া ও বাংলাদেশের জাতীয় সংবাদ সংস্থা বাসসের মধ্যেও একটি স্মারক সই হয়।
১৯. অপর আরেকটি দলিল সই করে সিনহুয়া সংবাদ সংস্থা ও বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)।
২০. একটি সমঝোতা স্মারক নবায়ন করে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
২১. টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।

৭ ঘোষণাপত্র:
১. চীন-বাংলাদেশ মুক্তবাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সমাপ্তি ঘোষণা।
২. চীন-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি ত্বরান্বিতকরণ নিয়ে আলোচনা শুরুর ঘোষণা।
৩. ডিজিটাল কানেকটিভিটি প্রকল্পের জন্য টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্কের আধুনিকীকরণের সমাপ্তির ঘোষণা।
৪. ডাবল পাইপলাইন প্রকল্পের সঙ্গে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিংয়ের ট্রায়াল রান সমাপ্তির ঘোষণা।
৫. রাজশাহী ওয়াসা সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট চালুর ঘোষণা।
৬. শানদং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই।
৭. বাংলাদেশে লুবান ওয়ার্কশপ নির্মাণের ঘোষণা।

বৈদ্যুতিক গাড়ি ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ খাতে ২৮ কোটি ডলারের চীনা বিনিয়োগ: ওদিকে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশের দুই কোম্পানি ‘বিলিয়ন-১০ কমিউনিকেশনস লিমিটেড’ ও ‘ই.বি সলিউশন্স লিমিটেডে’ বৈদ্যুতিক গাড়ি, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ সংক্রান্ত ছয়টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তিসমূহের আওতায় মোট ২৮ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হবে বাংলাদেশে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বেইজিংয়ে এই দুই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাফিউর রহমান খান ইউসুফজাই সানি এবং চীনের বিভিন্ন ব্যবসায়িক গ্রুপের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। স্মরণ করা যায়, প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বেইজিংয়ে ৯ই জুলাই চীন-বাংলাদেশ ব্যবসায়িক সম্মেলনে মোট ১৬টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।

সহযোগিতা বাড়াতে বাসস-সিনহুয়া-সিএমজি’র মধ্যে দু’টি চুক্তি: এদিকে জাতীয় বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) গতকাল সিনহুয়া নিউজ এজেন্সি এবং চায়না মিডিয়া গ্রুপের (সিএমজি) সঙ্গে খবর এবং তথ্যের বিষয়ে সহযোগিতা জোরদারে দু’টি পৃথক সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ এবং সিনহুয়া নিউজ এজেন্সি ও চায়না মিডিয়া গ্রুপের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা নিজ নিজ পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। সমঝোতা স্মারকের অধীনে, বাসস এবং সিনহুয়া তাদের নিজ নিজ দেশীয় আইন এবং তাদের নিজস্ব নীতি অনুযায়ী সংবাদ ও তথ্যের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা করবে। এ ছাড়াও, সংবাদ সংস্থাগুলো পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়ানোর জন্য উচ্চপর্যায়ের সফর বিনিময় করবে এবং পারস্পরিক পরামর্শের মাধ্যমে এই ধরনের সফরের জন্য দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা চুক্তি প্রচারের বিষয়ে মতামত বিনিময় করবে। চুক্তি অনুযায়ী, সিনহুয়া বাসস-এর সঙ্গে বহুমাতৃক এবং বিস্তৃত সহযোগিতা পরিচালনা করবে, যার মধ্যে সংবাদ, তথ্য ও তথ্য পণ্যের আদান-প্রদানে সীমাবদ্ধ না থেকে সাংবাদিক, সম্পাদক এবং প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের জন্য ব্যক্তিগত বিনিময়, প্রশিক্ষণ এবং সেমিনার পরিচালনা করবে। বাসস এবং চায়না মিডিয়া গ্রুপ প্রযুক্তিগত আদান-প্রদান এবং সহযোগিতা বিশেষ করে মিডিয়া প্রযুক্তিতে উদ্ভাবন ও উন্নয়ন জোরদার করবে।

বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক সহায়তা দিবে চীন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী: ওদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং এ দেশকে অর্থনৈতিক সহায়তা হিসেবে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বুধবার বেইজিংয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান। বলেন, চীনের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় এগিয়ে নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সব বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। চীন বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় অব্যাহতভাবে সহযোগিতা করে যাবে জানিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, তার দেশ বাংলাদেশের আরও বেশি বিনিয়োগ করতে চায়। ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।


শেয়ার করুন