সারাদেশ

এজিএম বাপ্পি ও তার মতো আড়ালের সাহসী যোদ্ধারা হারিয়ে যান পোস্টার-ব্যানারের ভিড়ে

  প্রতিনিধি ২৩ আগস্ট ২০২৫ , ৩:৩৩:০৭

শেয়ার করুন

শাহাদাত হোসেন, হাতিয়া প্রতিনিধি-

হাতিয়া—দূর বঙ্গোপসাগরের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপ । ইতিহাস সাক্ষী, এ দ্বীপ থেকে উঠে এসেছেন বহু জাতীয় পর্যায়ের নেতা, যারা দেশকে দিয়েছেন আন্দোলন ও মুক্তির নতুন ঠিকানা।

২০২৪ সালের সেই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান—যেখানে দেশের রাজনৈতিক অচলায়তন কেঁপে উঠেছিল, সেই আন্দোলনের কাণ্ডারি হয়ে হাতিয়ার তিন সন্তান ছিলেন সমন্বয়কের দায়িত্বে। হান্নান মাসুদ, তানভীর শরীফ, এবং এজিএম বাপ্পি।তারা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করেছেন শহর থেকে শহর, প্রান্ত থেকে প্রান্ত। ছাত্র-জনতার মুক্তির আলো হয়ে জ্বলে উঠেছিল এ দ্বীপের সন্তানরা। হান্নান মাসউদ আর তানভীর শরীফের নাম আছে পোস্টারে, ফেসবুকের প্রচারণার ঝলকে। কিন্তু এজিএম বাপ্পির মতো নামগুলো হারিয়ে যায় অন্ধকারে।

যিনি আন্দোলনের উত্তাল সময়ে চট্টগ্রামের জেলার সহ – সমন্বয়ক এবং মহসিন কলেজে ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারির দায়িত্ব সামলেছেন দক্ষ হাতে। মহসিন কলেজ থেকে রসায়নে অনার্স শেষ করে এখন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কেমিস্ট্রি ফর ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ বিভাগে মাস্টার্স করছেন। পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব হিসেবে। তাঁর বাড়ি হাতিয়া উপজেলার খবির মিয়ায়। কিন্তু আন্দোলন শেষে তাকে নিয়ে মাতামাতি হয়নি । কারণ তার পকেটে কালো টাকা নেই। ছাত্রশিবির তাকে শিখিয়েছে নীতি-নৈতিকতার রাজনীতি। কিন্তু বাংলাদেশে ইসলামি রাজনীতি ছাড়া বাকিগুলো তে অবৈধ টাকা ছাড়া নেতা হওয়া যায় না, যার যত অবৈধ টাকা সে ততবড় নেতা।

এটাই আমাদের রাজনীতির তিক্ত বাস্তবতা। এখানে রাজনীতি আর নীতি এক হয়ে যায় না। এখানে সংগঠক আর ব্যবসায়ী এক হয়ে যায়, নীতি আর চুক্তি টাকার বস্তার নিচে চাপা পড়ে। এই দেশে যারা সৎ থাকতে চায়, তারা আড়ালেই থাকে—কারণ সৎ লোকের পোস্টার ছাপানোর টাকা থাকে না।

এখানেই প্রশ্ন—এই গণঅভ্যুত্থান কি শেষ? নাকি এর শুরু? যারা এখনও কেবল ব্যানারে আর হেডলাইনে মুখ দেখে নেতা চেনেন, তারা জানুক— বাংলাদেশে এখনও হাজারো এজিএম বাপ্পি আছে। তারা লুকিয়ে আছে, বেঁচে আছে স্বপ্নে আর শ্লোগানে। কালো টাকার পাহাড় গড়তে তারা রাজি নয়, কিন্তু শোষণের পাহাড় ভাঙতে তারা রাজপথে মরতে প্রস্তুত।

লাল জুলাই আমাদের মনে করিয়ে দেয়—যখন দেশ আবার ক্রান্তিকালে দাঁড়াবে, তখন ব্যানারের নেতা নয়, এই আড়ালের নেতারাই রাজপথে বুক চিতিয়ে দাঁড়াবে। কারণ গোপন ছাইয়ের নিচে রাখা আগুনই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হয়।

যারা ক্ষমতার দালান তৈরি করতে কালো টাকার পাহাড় গড়ছেন, তারা বুঝুক—দেশের ভবিষ্যত বাঁচে না টাকার জোরে, বাঁচে মিছিলের শ্লোগান আর রক্তের দামে। এজিএম বাপ্পিদের মতো সাহসীরা হারাবে না—কারণ তারা ইতিহাসের রাজনীতি করে, লেনদেনের রাজনীতি নয়।

এই লাল জুলাইয়ে তাই আমাদের প্রতিজ্ঞা—আমরা হারানোদের ফিরেয়ে আনবো, আড়ালে থাকা সাহসীদের গল্প বলবো, কালো টাকার দম্ভ ভেঙে আবার মিছিলের পথে হাঁটবো।
হাতিয়ার খবির মিয়া গ্রামের সেই ছেলেটির মতো বাংলাদেশজুড়ে ছড়িয়ে আছে আরও শত শত বাপ্পি—যাদের নাম হয়তো কোনো ব্যানারেও লেখা থাকবে না, মিডিয়ার আলোও তাদের ছুঁবে না, কিন্তু তারা ইতিহাসের ছায়ায় বেঁচে থাকবে।


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content