প্রতিনিধি ৪ নভেম্বর ২০২৫ , ৮:৪০:৫৬

পথশিশু ও গৃহহীন মানুষেরা আমাদের শহরের গলিপথে, সিগন্যাল ঘরে, স্টেশনের কক্ষে চুপচাপ বসে আছে—তারা যেনো শহরের হালচাল থেকে বাদ পড়া এক ক্লান্ত অধ্যায়। আমরা যে কোনো সামান্য জ্বর-কাশিতেই ডাক্তার, ওষুধ, আর আরামের খোঁজ করি; তাঁদের কাছে তো সেই সুযোগও নেই। রাতের অন্ধকারে কেউ যদি চিল করে ছাতা মেলে দিলে খুশি হবে — এমন ছোট্ট সুখও তাদের কাছে বিলাস: এক টুকরো কম্বল, এক প্লেট ভাত, আর মৃদু কোনও বীরকি স্পর্শ—এগুলি আমাদের অনেক সময় অদেখা থেকে যায়।
আর দুঃখের কথা—যেসব শিশুই এই অমানবিক অবহেলায় পড়ে, অনেকেই ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলে জীবনের ধার। ভিতরে থাকা কষ্ট, একাকিত্ব আর উপেক্ষার সীমা ছুঁয়ে তাদের ভর করে নেমে আসে অন্ধকার—কখনো মাদক, কখনো চুরির পথ। আমরা সহজেই টেনে আনতে পারি তাদের ‘অপরাধী’ বলেই; কিন্তু সত্য কথা হলো—তারা অপরাধী হয়নি, তারা নির্মাণ হয়েছে আমাদের অবহেলার আভায়। যখন শিশুর কাছে খাবার, আশ্রয়, শিক্ষা নেই; যখন কোনো সহানুভূতি নেই—তখন সে ভুল পথে পা বাড়ায়। সেই পথটি আমরা তৈরি করেছি — সরাসরি বা ইঙ্গিতে, ভুলে বা অবহেলায়—অতএব এই দণ্ডের অংশ আমরা সবাই।
এই অনাকাক্সিক্ষত বাস্তবতা আমাদের প্রশ্ন করতে বাধ্য করে: আমরা কীভাবে চোখ বন্ধ করে থাকতে পারি? যে সমাজ শিশুদের নিরাপদ করে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে, সেটা কীভাবে নিজের গুণাগার রক্ষা করবে? যদি আমাদের সামান্য উদারতা—এক প্লেট ভাত, একটা কম্বল, মাঝেমধ্যে একটি কিশোরের হাতে সুগঠিত শিক্ষা—দিয়ে তারা অন্য পথে ফিরিয়ে আনা যায়, তাহলে সেটি কি অপরিমেয় বিনিয়োগ নয়?
আমার সাধ্য অল্প, কিন্তু ইচ্ছে অনেক। অনেকেরই সাধ্য কম, তবু ইচ্ছা আছে—সেই ইচ্ছাগুলো যদি একত্রিত করা যায়; যদি প্রতিবেশী, স্কুল, মসজিদ, ছোট ব্যবসায়ী, স্বেচ্ছাসেবী মিলিত হয়ে কাজ শুরু করে—তবে পথের কুলে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুটির জীবন বদলে দেওয়া সম্ভব। ছোট উদ্যোগ—রাস্তায় খাবার বিতরণ, কম্বল বণ্টন, স্থানীয় NGO-কে সাহায্য, স্বেচ্ছাসেবীদের একটি শিক্ষা ক্লাস—এসবই ধীরে ধীরে ভাঙবে অবহেলার প্রাচীর।
শেষে বলতে চাই—যখনই আমরা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাব, একটু চোখ খুলে তাকাই। যদি আমাদের এক মুহূর্তের সহানুভূতি কারও জীবন বদলে দিতে পারে, তাহলে সেটা করা আমাদের অপরিহার্য কর্তব্য। যে পথে আমরা বাস করছি, সেই পথের শিশুদের কথা কেউ ভাববে—তার দায় গ্রহণ করতে আমাদের আর দেরি করা উচিত নয়। আমরা অপরাধী নই—কিন্তু যদি আমরা অবহেলা করি, উঠে দাঁড়াই না, সহানুভূতি না দেখাই—তবে আমরা বহুধা দায়ী।
চলুন, অল্পটুকু ত্যাগ করে তাদের জন্য আমরা সচেতন হই; না হলে তাদের কষ্টে কেবলই নতুন অপরাধ জন্মাবে—আর সে অপরাধের দায়ভার আমাদের কাঁধেই থাকবে।











