প্রতিনিধি ১৬ এপ্রিল ২০২৩ , ৪:০৬:৩৫
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের মামলার প্রসঙ্গ তুলে দুর্নীতি দমন মিশনকে (দুদক) ‘বিএনপি দমন কমিশন’ হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দুদকের করা সেই মামলাকে ‘মিথ্যা’ দাবি করে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “দুর্নীতি দমন কমিশন যেন আজ বিএনপি দমন কমিশনের পরিণত হয়েছে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, যেসব সম্পত্তির মালিক তারেক রহমান নন, কোনো দলিল বা চুক্তিতে যেখানে তারেক রহমানের নাম, স্বাক্ষর বা সংশ্লিষ্টতা নাই, তাকে সেসব সম্পত্তির গায়েবী মালিক বানিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
“এমনকি তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের কর পরিশোধকৃত সম্পদ নিয়েও কল্পনিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।”
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, “দেশের বিরাজমান সীমাহীন দুর্নীতির মহাতাণ্ডব দুর্নীতি দমন কমিশনের চোখে পড়ছে না। বর্তমানে আওয়ামী সরকারের ছত্রছায়ায় এবং পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের অনুগত ব্যবসায়ী, আমলা ও নেতাকর্মীরা দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছে।
“তাদের বিরুদ্ধে দুদক কোনো পদক্ষেপ নেয় না। তারা (দুদক) এখন ফ্যাসিস্ট এই সরকার আন্দোলন দমাতে যে চক্রান্ত শুরু করেছে, তার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।”
অবৈধ সম্পদের মামলায় বৃহস্পতিবার তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত। ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. আছাদুজ্জামান এদিন পলাতক দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর জন্য ১৬ মে দিন ঠিক করে দেন।
আইনের চোখে পলাতক হলেও তারেক ও জোবায়দার পক্ষে সেদিন আইনজীবী নিয়োগের একটি আবেদন করা হয়েছিল। সে আবেদন নামঞ্জুর করে অভিযোগ গঠনের শুনানি করেন বিচারক।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক ও তার স্ত্রী বিরুদ্ধে ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলাটি হয় ২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে। তখন তারেক গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
দেড় বছর কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে যুক্তরাজ্যে যান, তারপর আর দেশে ফেরেননি। বিদেশে থেকেই বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান হন তিনি; এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করছেন।
দুদকের সেই মামলায় তারেক-জোবাইদার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পেছনে বিএনপির চলমান আন্দোলনকে নস্যাৎ করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে বলে মনে করেন ফখরুল।
“তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে নেতাকর্মী ও জনগণের মনোবল বিনষ্ট করতেই সরকারের ইঙ্গিতে মামলার চার্জ গঠন করা হয়েছে।
“যেসব অভিযোগে এই মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে তা অবান্তর, ভিত্তিহীন ও অমূলক। চার্জ গঠন করে মামলার একতরফা যে রায় দেওয়া হবে তা হবে প্রতিহিংসামূলক, ফরমায়েশী।”
ফখরুল বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এসব মামলা, অভিযোগ গঠন, আদেশ, রায় দিয়ে তারেক রহমানের নেতৃত্ব প্রশ্নবিদ্ধ, বিতর্কিত বা ডা. জোবাইদা রহমানকে হেয় প্র্রতিপন্ন করতে পারবে না। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটাধিকার ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনকে বিভ্রান্ত বা নস্যাৎ করতে পারবে না।
“আমরা ইতিপূর্বে বলেছি, এই ১/১১ থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে সরানোর একটা স্কিম কাজ করেছে যা বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে। তারই অংশ হিসেবে গত সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগে অর্থাৎ ২০১৮ সালে বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছিল।”
“এখনও ঠিক একই কায়দায় আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে একতরফাভাবে সাজা দেওয়ার সকল প্রকারের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সরকার”, বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল উপস্থিত ছিলেন।