সারাদেশ

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগের তাগিদ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের

  প্রতিনিধি ১০ আগস্ট ২০২৩ , ৮:৩৩:২৩

শেয়ার করুন

এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুর সংক্রমণ ও মৃত্যু অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙেছে। রোগটি শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক হলেও বর্তমানে তা সারাদেশে ছড়িয়েছে। এ অবস্থায় বর্তমান পরিস্থিতিকে স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা, না করায় আটকে না থেকে সকলকে সমন্বিতভাবে কাজ করার তাগিদ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) রাজধানীর মহাখালীর নিপসম অডিটোরিয়ামে ‘সেমিনার অন চ্যালেঞ্জ টু প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল অব ডেঙ্গু ইন বাংলাদেশ: দ্যা ওয়ে ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক সেমিনারে আলোচকরা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. সামিয়া তাহমিনা। তিনি বলেন, দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। আমরা এখন ডেঙ্গু মহামারিতে আছি কিনা, এর কোনো সরাসরি উত্তর নিতে চাচ্ছি না। শুধু বলব আমরা অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে এসেছি। হাসপাতালগুলো রোগীতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। মুগদা মেডিকেলে রোগী ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলো রোগী ভর্তি বন্ধ করে দিয়েছে। তারা জটিল রোগীদের ভর্তি করছেন না। এটি অত্যন্ত আতঙ্কের একটি পরিস্থিতি।

ডেঙ্গু মোকাবেলায় নেওয়া কার্যক্রম প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক এই অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস সার্ভের বাইরে আমার তেমন কিছুই করতে পারি না। এর কারণ আমাদের বেশ কিছু এবং দক্ষ জনবলের ঘাটতি। আমাদের কাজে ভুল রয়েছে। ডেঙ্গু মওসুম শুরুর আগে আমাদের লার্ভিসাইটিং করতে হবে যেন এডিসের লার্ভা ধ্বংস করতে পারি। কিন্তু আমাদের করা হচ্ছে ফগিং। অথচ ফগিং এডাল্ট মশা নিধনের জন্য প্রয়োগ করা হয়। তাও বর্তমানে কতটা কার্যকর তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ডেঙ্গু ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে অধ্যাপক তাহমিনা বলেন, তিন ধরনের ডেঙ্গু ভ্যাকসিন রয়েছে। এর দুইটি বাজারে রয়েছে। অপরটি ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছে। এর একটি ফিলিপাইনে ডিজাস্টার ঘটিয়েছে। ফলে এটি ব্যবহারের বিষয়ে এখনও চিন্তা-ভাবনা চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এ নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। নিরাপদ নিশ্চিত হওয়ার পর এটি ব্যবহারের বিষয়ে ভাবা যেতে পারে।

healthস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোস্তাক আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ সরকার কখনোই গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়নি। বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময়েও বাংলাদেশে সরকারিভাবে গেজেটের মাধ্যমে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও তা নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, স্বরাষ্ট্র ও গণপূর্তসহ সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে।

দেশে ডেঙ্গুর ধরন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের দেশে এখন ডেঙ্গুর চারটি ধরনই পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধরন অধিক বলে জানা গেছে। একাধিক ধরন একটিভ থাকায় ঝুঁকি অধিক। তাই সকল ডেঙ্গু রোগীকে পরিপূর্ণ বেড রেস্ট এবং চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। অন্যথায় বিপদের শঙ্কা রয়েছে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যবহৃত কেমিক্যাল ও এর কার্যকারিতা প্রসঙ্গে অধ্যাপক গোলাম সারওয়ার বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে ৩০ শতাংশ এডাটিসাইট সফল হয়। যা আমরা ফগিংয়ের মাধ্যমে করে থাকি। মশা ইতিমধ্যে এটি প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। মশা তার আচরণগত পরিবর্তন করেছে। ফলে তার কার্যকর ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধের যে চিত্র দেখতে পারছি তা শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকার। সারাদেশের পরিস্থিতি কি তা আমরা জানি না। এটি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বড় অন্তরায়।

সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ওবায়দুর রহমান সিটি করপোরেশনের কাজের নানাদিক ও সীমাবদ্ধতার দিকগুলো তুলে ধরেন তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধ কারো দায় নয়, সকলের দায়িত্ব।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, আমাদের সমস্যাটি ইতোমধ্যে চিহ্নিত। এসব সমস্যার কারণ এবং সমাধান আমাদের সকলের জানা আছে। এখানে একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ জড়িত। ডেঙ্গু নতুন কোনো রোগ নয়। এটি আমাদের দেশে ৬০ এর দশকে দেখা দেয়। এরপর ২০০০ সালে তা পুনরায় দেখা দেয়। যা এখন একটি বিরাট সমস্যা আকারে দেখা দিয়েছে। এটি প্রতিরোধে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। এটি এককভাবে স্বাস্থ্য বিভাগের সমস্যা নয়।

কমিউনিটিতে রোগীর প্রকৃত সংখ্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা ৭০ হাজার শনাক্ত বা হাসপাতালে করেছি। এটি আইসবার্গ মাত্র। এর অন্তত ৫ গুন রোগী কমিউনিটিতে রয়েছে। যারা কখনওই পরীক্ষা বা চিকিৎসার আওতায় আসে না।

রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার এই পরিচালক আরও বলেন, আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে ৫ কোটির অধিক মানুষের কাছে ডেঙ্গুর সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। এক্ষেত্রে কমিউনিটির সহযোগিতা প্রয়োজন। সকলে সচেতন হলে ডেঙ্গু মোকাবিলা সহজ হবে।

 


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content