প্রতিনিধি ২৮ আগস্ট ২০২৩ , ৩:৫৯:৪৬
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিদিন হাজারো মানুষ চিকিৎসার জন্য আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ(ঢামেক) হাসপাতালে। কিন্তু অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ হাসপাতালকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে বড় ধরনের ফাঁদ। আর এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে ঢামেকে দালালির কাজ করে কিছু চক্র। যাদের প্রধান কাজ- বিভিন্ন প্রলোভনে ঢামেক থেকে রোগী ভাগিয়ে নেওয়া।
আর এই রোগী ভাগানোকে কেন্দ্র করে এসব দালাল গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটে। যার আবার প্রতিফলন ঘটেছে গতকাল মধ্যরাতে। সেদিন দালালদের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
রোববার (২৭ আগস্ট) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢামেক ও চানখারপুল এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ঢামেক সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মেডিকেলে দালালদের দুইটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় রোগী ভাগিয়ে নেওয়াকে কেন্দ্র ঝামেলা হয়। অনেক সময় তারা বাইরে থেকে বিভিন্ন লোকজন এনে মেডিকেলে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে। কয়েক মাস আগে ২১২ নাম্বার রুম থেকে রোগী ভাগিয়ে টিজি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে নোবেল নামে এক দালালের সঙ্গে ডাক্তারদের টানাটানি হয়। পরে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। গতকাল রোববারও রোগী ভাগিয়ে নেওয়াকে কেন্দ্র করে নোবেল ও নাদিম গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের অভিযোগ উঠেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মেডিকেলের ২১১ নাম্বার ওয়ার্ডে এনআইসিইউ সংকট রয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যায় চক্ররা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোববার দালালদের দুইটি গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং মারামারির ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় আহত নাদিম জানান, আমি রাতে ২১১ নাম্বার ওয়ার্ডের সামনে ছিলাম। আমি মেডিকেয়ার হাসপাতালে চাকরি করি। রাত ১২টার দিকে আমার ভাগ্নি সীমার ২১২তে সিজার হচ্ছিল। তখন আমি সেখানে দাঁড়িয়েছিলাম। এসময় নোবেলের নেতৃত্বে ২৫-৩০ জনের একটি দল আমাকে দুই তলা থেকে টেনে নামিয়ে বাগান গেটের ভিতর এনে গালাগালি করে এবং এলোপাতাড়ি কিল ঘুসি মারতে থাকে। পরে আমাদের লোকজন খবর পেয়ে তাদের ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। পরে আমি ঢাকা মেডিকেলে এসে চিকিৎসা নেই।
তিনি অভিযোগ করেন, মোহাম্মদপুরের কলেজগেটে ডা. মাহফুজের টিজি হাসপাতালে রোগী নেওয়ার জন্য প্রায়ই তারা বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দেয়। মূলত ২১১ এবং ২১২ নাম্বার ওয়ার্ডের রোগী ভাগিয়ে টিজি হাসপাতালে নেওয়ার জন্য তারা এই হামলা মারপিট করে।
এ বিষয়ে নোবেল বলেন, আমি একটি অনলাইন গণমাধ্যমে কাজ করি। সেটির তথ্য সংগ্রহ করতে ঢামেকে যাই। পরে তারা আমাকে জরুরি বিভাগের পাশের ব্রিজের উপর একা পেয়ে মারধর করে। সেসময় আমি আনসার সদস্যদের সহযোগিতায় পুলিশ ক্যাম্পে আশ্রয় নেই।
দালালির অভিযোগের বিষয়ে নোবেল বলেন, আমি কোনো দালালি করি না। আমি সেখানে সংবাদ সংগ্রহের কাজে গিয়েছিলাম। আর আমি কাউকে মারধর করিনি বরং তারাই আমাকে আহত করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মেডিকেলের এক কর্মচারী বলেন, রোববার রাতে আমার সঙ্গে নোবেলের মেডিকেলের বাগান গেইটে দেখা হয়। তখন নোবেল বলে- নাদিমরে আজকে মারতে মারতে জরুরি বিভাগে দিয়ে এসেছি। আমার আজকে ওই গ্রুপের যাকেই পাব তাকেই পেটাব।
ঢামেকের ওই কর্মচারী আরও বলেন, নোবেল পুরোবিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কথা বলছে। সে যে বলেছে সংবাদ সংগ্রহের কাজে এসেছিল, বিষয়টি হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই না।
জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের আনসারের প্লাটুন কমান্ডার(পিসি) উজ্জ্বল বেপারী বলেন, গতকাল মধ্যরাতে একটি মারামারির ঘটনা ঘটে। কে বা কারা মারামারি করেছে, সে বিষয়টি বলতে পারছি না। প্রথমে একটি গ্রুপ বাগান গেইটে একজনকে মারধর করে বলে জানতে পেরেছি। পরে অন্য আরেকটি গ্রুপ জরুরি বিভাগের পাশের ব্রিজের উপর পাল্টা মারধর করে পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হক বলেন, আমি বিষয়টি আপনার কাছ থেকে জানলাম। আমাদের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের জন্য আইসিইউ তৈরি করা হচ্ছে। এনআইসিইউ এক্সটেন্ড করা খুবই কষ্টকর, তারপরও আমরা চেষ্টা করছি এটা কীভাবে আরো বাড়ানো যায়।
এমন ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং মারামারির ঘটনা যেন না ঘটে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে রোগী ও তাদের স্বজনরা পদে পদে ভোগান্তির শিকার হন। এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সরকারি স্টাফ ও আনসার সদস্যদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে।