প্রতিনিধি ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ১২:৩৯:৪৪
পাল্লেকেলে মাঠে খেলার টাটকা অভিজ্ঞতা ছিল সাকিব আল হাসানের। বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক সেখানে সদ্যই খেলেছেন স্থানীয় টুর্নামেন্ট- লঙ্কা প্রিমিয়ার লীগে। এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে মোকাবিলার আগে আত্মবিশ্বাসী সাকিব শুনিয়েছিলেন বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা। তার পরিচিত উইকেট এবং প্রতিপক্ষ দলে কিছু শীর্ষ ক্রিকেটারের অনুপস্থিতিকে নিজেদের জন্য প্লাস পয়েন্ট হিসেবে দেখছিলেন সাকিব। টস ভাগ্যে দিনের শুরুটাও ছিল সাকিবের। তবে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে টসে জিতে ব্যাটিং বেছে নিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। আর ঠুনকো ব্যাটিংয়ে দল ৪২.৪ ওভারে ১৬৪ রানে অলআউট। ব্যাটিং দুরুহ উইকেটেও এমন টার্গেট ছোটই। শুরুতে একটু খেই হারালেও দলের বড় বিপদ হতে দেয়নি লঙ্কানরা। এশিয়া কাপে বাজে হার দিয়ে মিশন শুরু করলো বাংলাদেশ।
গতকাল পাল্লেকেলেতে অনেকটা একপেশে লড়াইয়ে স্বাগতিকদের কাছে ৫ উইকেটে হার দেখে সাকিবের দল। ম্যাচ শেষে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দাসুন শানাকা বলেন, ‘বাংলাদেশ যে রান করেছে, আমাদের মনে হয়েছে এ উইকেট তার চেয়ে ভালো।’ আর সাকিব বললেন গৎবাঁধা কথা। টাইগার অধিনায়ক বলেন, ‘এটা ৩০০ রানের উইকেট নয়, তবে আমাদের ২২০-২৩০ রান প্রয়োজন ছিল। বোলাররা অনেক দিন ধরেই তাদের কাজটি করছে। তবে যথেষ্ট রান ছিল না। আমরা এ ম্যাচ থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগোব।’ রোববার লাহোরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচ বাংলাদেশের।
এদিন মামুলি পুঁজিতে দলীয় ১৩ ও ১৫ রানে উইকেট নিয়ে ম্যাচে উত্তেজনা ফেরান পেসার তাসকিন আহেমেদ ও শরিফুল ইসলাম। অল্পতে সাজঘরে ফেরেন দুই লঙ্কান ওপেনার দিমুথ করুনারত্নে (১) ও পাথুম নিশাঙ্কা (১৪)। আর দলীয় ৪৩ রানে শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞ ব্যাটার কুশল মেন্ডিসকে সাজঘরে ফিরিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। কিন্তু চতুর্থ উইকেটে সাদিরা সামারাবিক্রমা ও চারিথ আসালাঙ্কা ৭৮ রানের জুটি গড়ে টাইগারদের আশা ফিকে করে দেন। যদিও শেষ দিকে দ্রুত দুই উইকেট পতন হলে ম্যাচে চাঞ্চল্য ফেরে কিছুটা। ব্যক্তিগত ৫৪ রানে অফস্পিনার শেখ মেহেদী হাসানের বলে সামারাবিক্রমাকে স্টাম্পিং করেন মুশফিক। ৭ রানের ব্যবধানে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে সরাসরি বোল্ড করে দেন সাকিব। এতে ৩১ ওভার শেষে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ দাঁড়ায় ১২৭/৫-এ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৬৬ বল বাকি রেখেই জয়ের সঙ্গে ম্যাচের ২ পয়েন্ট কুড়ায় লঙ্কানরা।
অথচ এবারের এশিয়া কাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচের আগের আলোচনা ছিল সম্পূর্ণ উল্টো। শ্রীলঙ্কা দলের বোলিং যেহেতু চোটের কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে, তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটিংটা ভালো হবে, এমনই ছিল পূর্বানুমান। কিন্তু শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় সারির বোলারদের বিপক্ষেও নাকাল টাইগার ব্যাটাররা। কেবল নাজমুল হাসান শান্ত ব্যতিক্রম। নইলে বাংলাদেশের স্কোরটা কেমন হতো তা অনুমান না করাই ভালো। দলীয় ১৬৪ রানের মধ্যে ৮৯ রানই আসে শান্তর ব্যাট থেকে। অনেকে মহেশ থিকশানা ও মাতিশা পাতিরানার উদাহরণ টানতে পারেন। দুজনই আইপিএলে নিয়মিত। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুজনের সম্মিলিত অভিজ্ঞতা মাত্র ২৬টি ওয়ানডে ম্যাচের। গতকাল টাইগার ব্যাটারদের সর্বনাশের মূলে ছিলেন এ দুজন। বল হাতে দুজনে মিলে ১৫.৪ ওভারে দেন মাত্র ৫১ রান, উইকেট নিয়েছেন ৬টি।
ইনিংসের শুরুতে থিকশানার ক্যারম বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন অভিষিক্ত ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। অপর ওপেনার মোহাম্মদ নাঈমের শুরুটা অবশ্য আশা জাগাচ্ছিল। লঙ্কান পেস অ্যাটাকের বিপক্ষে কাভার ড্রাইভে দুটি বাউন্ডারি মারেন নাঈম। কিন্তু স্পিন আসতেই বদলে গেলো চিত্র। ইনিংসের অষ্টম ওভারেই অনিয়মিত অফ স্পিনার ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার হাতে বল তুলে দেন লঙ্কান অধিনাযক দাসুন শানাকা। ক্রিজ ছেড়ে খেলতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ তোলেন নাঈম। ২৩ বল খেলে ১৬ রান থামে নাঈমের ইনিংস।
দ্রুত দুই বাঁহাতি ওপেনারের বিদায়ে মনে হচ্ছিল একজন ডানহাতি ব্যাটার ক্রিজে আসবেন, কিন্তু তা হয়নি। অধিনায়ক সাকিব নিজেই এলেন চার নম্বরে। কিন্তু তার প্রতি আক্রমণে চাপ সরানোর কৌশল কাজে লাগেনি। ৫ রান করে পাতিরানার প্রথম শিকার হয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরেন সাকিব।
এতে ১০.৪ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩৬/৩-এ। পাওয়ার প্লের ৬০ ডেলিভারির মধ্যে ৪০টি ছিল ডটবল। পরে ২০ রান করে তাওহিদ হৃদয় আউট হলে আবারো ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহীমের ব্যাটিং ও আউটের ধরন দেখে মনে হলো তার কাছে ভক্তদের আর কিছু আশা করা উচিৎ নয়। এদিন ২২ বল খেলে ১৩ রান করা মুশফিক সহজেই উইকেট দেন লঙ্কান পেসার পাতিরানাকে। মুশফিকের বিদায়ে ৩২.৪ ওভার শেষে ১২৭/৫ সংগ্রহ নিয়ে বিপর্যয় বাড়ে সাকিবের দলের। এরপর টাইগারদের অপরিপক্ক লেজ গুটিয়ে গেলে দ্রুতই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় ‘টিম টাইগার্স লাইন আপ’। শেষ ৩৭ রানে ছয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। শেষ পাঁচ ব্যাটারের সংগ্রহ ছিল ৫, ৬, ০, ২, ০। খেলা শেষে ম্যাচসেরার পুরস্কার কুড়ান পাতিরানা। ট্রফি হাতে ২০ বছর বয়সী লঙ্কান পেসার বলেন, ‘এটি আমার দেশের হয়ে প্রথম ম্যাচসেরার পুরস্কার। আমি খুবই খুশি।’